মোঃ আরিফ মন্ডল বিশেষ প্রতিনিধি: আশুলিয়ায় টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের কর্তৃত্ত্ব নিয়ে দ্বন্দ এখন চরমে। ক্ষমতার লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা এবং অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ। এনারা সহোদর দুই ভাই। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বিবদমান বিরোধের অবসানে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, আশুলিয়া ও সাভারে অবস্থিত টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা ২০১০ সালে তিনি সেনা বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এর এক বছর আগে ২০০৯ সালে মাসুদ রানা ও তাঁর সহোদর ছোট ভাই আব্দুল লতিফ মিলে গড়ে তুলেন দি টাঙ্গাইল ক্যাডেট একাডেমি। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ নামে প্রতিষ্ঠা পায়।
ইতিমধ্যেই স্কুল এবং কলেজ মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ৬ টি শাখা, প্রায় ৩ হাজার ৫’শ শিক্ষার্থী, তিন শতাধিক শিক্ষক ও প্রায় দেড় শতাধিক কর্মচারী রয়েছে। দ্রুত প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক উন্নতিও হতে থাকে। সম্প্রতি টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও ছোট ভাই আব্দুল লতিফ ও চেয়ারম্যান বড় ভাই মাসুদ রানার সাথে পরষ্পর বিরোধী অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অভিযোগের কারনে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেছেন অভিভাবকরা।
টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মাসুদ রানা তার ছোট ভাই আব্দুল লতিফকে মানুষ করেছেন। সেনাবাহিনীতে চাকরী করে বেতনের অর্থ দিয়ে তাদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মাসুদ রানা তাঁর নিজের অর্থ এবং আব্দুল লতিফ পরিশ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আজ এমন দ্বন্দে আমরা হতাশ হয়ে পরেছি।
টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সূত্র জানায়, ইউনিক এলাকায় অবস্থিত টাঙ্গাইল রেসিডেনশিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল লতিফকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বহিস্কার ও অব্যহতি প্রদান করেছে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি। গত ২২ আগস্ট বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নানা আর্থিক অনিয়ম এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়মবহির্ভূত কর্মকান্ডের জন্য তাকে বহিস্কার এবং অব্যহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আরো জানাগেছে, মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ একজন ব্যক্তি হয়ে একাই প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিষয়টি নিয়ে মাসুদ রানা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের পদ বিন্যাস করতে গেলে আব্দুল লতিফ একাই দুই পদে থাকবেন বলে প্রকাশ করে। এ নিয়ে মাসুদ রানা বিরোধীতা করলে শুরু হয় দ্বন্দ। প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ পদে আব্দুল লতিফ একসাথে থাকার বিষয়টি অবৈধ বলে জানায় কর্তৃপক্ষের অনেকে। এ ব্যাপারে কোন অনুমোদন বা লিখিত সিদ্ধান্তও নেই।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, তিনি ও তার স্ত্রী প্রাতিষ্ঠানিক অর্থ আত্মসাৎ করে ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের নামে জায়গা জমি ক্রয়, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং কমিটি ও নির্বাহী কমিটির সভাপতির বিনা অনুমতিতে স্বাক্ষর জাল করেছেন।এছাড়া একই ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল, টাঙ্গাইল রেসিডেনশিয়াল কলেজ-এর দায়িত্বে থাকাও সরকারি নিয়ম বহির্ভূত।
এমনি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুন্নাহার গত ২১ আগস্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রতিষ্ঠানের সভাপতির কাছে চিঠি প্রেরণ করেন। টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে মোঃ আব্দুল লতিফকে প্রধান শিক্ষক এর পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
এই পদের সকল ধরণের কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মাসুদ রানা, সহ-শিক্ষক মোছাঃ পারভীন বেগম, সহ-শিক্ষক মোঃ সোহেল রানা, অভিভাবক প্রতিনিধি মোঃ আব্দুল বারেক এবং কহিনুর আক্তার উপস্থিত ছিলেন। মাসুদ রানা আরো জানান, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম বহির্ভূত অনেক অনিয়ম ও আর্থিক কেলেংকারীর কারণে ইতোপূর্বে মোহাম্মদ আব্দুল লতিফকে পরপর দুইটি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
যার সন্তোষজনক কোনো উত্তর তিনি এখনও দিতে পারেননি। এছাড়া এর আগে ম্যানেজিং কমিটির চার জন সদস্যকে বিধি বহির্ভূতভাবে বাদ দিয়ে কমিটিতে তার স্ত্রী মিসেস সোনিয়াকে মনোনীত করেন যা নিয়ম বহির্ভূত। আবার একই ব্যক্তি দুইটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে থাকার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি এসব কিছু মানেননি।
তাই ব্যবস্থাপনা কমিটি আব্দুল লতিফকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বহিস্কার ও অব্যহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাসুদ রানা বলেন, আব্দুল লতিফের অনিয়মতান্ত্রিক কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় সে বিভিন্ন মহলে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে তথ্য প্রদান করছে। এসব তথ্যের কোন ভিত্তি নেই।এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বলেন
প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে বাদ দিতে চক্রান্ত চলছে।আমাকে বহিষ্কারের বিষয়টিও সঠিক নয়।সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুন্নাহার জানান, গত ২১ আগস্ট দুইটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একই ব্যক্তির দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য টাঙ্গাইল রেসিডেনশিয়াল স্কুল এর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে
অভিযোগ রয়েছে যার অনুলিপি আমার কাছে আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্যক্তিগত স্বার্থে যাতে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। পরষ্পর বিরোধী তথ্য ও অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা মনে না করে শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ডকলেজের পারিবারিক বিরোধ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হয়।বিষয়টি সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিরোধ মিটিয়ে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ গড়ে উঠবে এই প্রত্যাশা সকলের।